ঢাকা, রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

আমার রিকশাচালক বাবার তো কোনো দোষ ছিল না কেন তাকে মরতে হলো

আমার রিকশাচালক বাবার তো কোনো দোষ ছিল না কেন তাকে মরতে হলো - ছবি : নিউজমিডিয়া24

শান্তিনগর বটতলা গলিতে স্ত্রী ফাতেমা খাতুন, তিন মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার ছিল কামাল মিয়ার। নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার বিন্নাবাইদ গ্রামের কামাল মিয়া পেশায় রিকশাচালক, ফাতেমা খাতুন মানুষের বাসায় ঠিকা কাজ করেন। তারা এ থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে কোনো মতে ছেলেমেয়ের ভরণ-পোষণ ও লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। উদ্দেশ্য ছিল ছেলেমেয়েদের উপযুক্ত মানুষ করা। কিন্তু সব শেষ হয়ে যায় গত ১৯ জুলাই। কামাল মিয়া ১৫৩/১১ শান্তিনগরের বটতলা এলাকায় থাকতেন। একমাত্র ছেলে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার শেখ জনুরুদ্দিন দারুল উলুম মাদরাসায় নাজেরা বিভাগে পড়ে। ছেলেকে খাবার ও ধোয়া কাপড়- চোপড় দিয়ে আসতে সন্ধ্যার পর বের হয়েছিলেন। সেদিন রাস্তা যে উত্তপ্ত ছিল তা কামাল মিয়ার জানা ছিল না।

সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে বাসা থেকে বের হয়ে নয়াপল্টনের বটতলায় পা ফেলতেই গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান। মেয়ে সুরাইয়া (১৩) ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে, ‘আমার বাবারতো কোনো দোষ নেই, তিনি কোনো রাজনীতির সাথেও কখনো জড়িত ছিলেন না। রিকশা চালিয়ে আমাদের সংসার চালাতেন। আমার বাবার ধ্যান-জ্ঞান সবই ছিল আমাদের মা, তিন বোন ও এক ভাইকে ঘিরে। কিন্তু খেটে খাওয়া আমার এই বাবাটাকেই কেন গুলিতে নিহত হতে হলো?’ সুরাইয়া জানায়, পাড়ার একটি ছেলে বাসায় এসে জানায়, বাবা গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন। সাথে সাথে আমি দৌড়ে যাই এবং দেখতে পাই কিছু লোক বাবাকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলি যে, ‘আমি ওনার মেয়ে, আমাকে সাথে নিন। কিন্তু আমাকে না নিয়েই তারা বাবাকে নিয়ে যায়।’ সেদিনকার ঘটনা বর্ণনা করে সুরাইয়া আরো জানায়, ‘তা সত্ত্বেও আমি সিএনজির পেছনে দৌড় দেই, তখন পুলিশ আমাকেও লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একটি ছেলে আমার হাত ধরে টান দিয়ে সরিয়ে না আনলে আমিও হয়তো গুলিবিদ্ধ হতে পারতাম। কিন্তু আমাকে টান দিয়ে সরিয়ে আনার কারণে সেই ছেলেটির হাতে গুলি লাগে। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আমার বোন আসলে পুলিশ বোনকেও গুলি করার চেষ্টা করে। তখন আমাদের আশপাশে থাকা লোকেরা চিৎকার করে বলে যে, ‘আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের গুলি করবেন না। এ কথা শুনে পুলিশ আর গুলি করেনি।’

আরো সংবাদ


AD HERE