শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসার সবই ঢাকায়, বাইরে কেবল রক্তের চিকিৎসাসেবা
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩ ফাল্গুন ১৪৩০, ০৫ শাবান ১৪৪৫

শিশু ক্যান্সার চিকিৎসার প্রায় সবই ঢাকায়, ঢাকার বাইরে রয়েছে সীমিত সুযোগ। বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে ০.৫ থেকে ৪.৬ শতাংশ শিশু, বাংলাদেশেও এমনই হতে পারে। এ দেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে ঠিক কত শতাংশ শিশু তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে ধরে নেয়া হয় যে, এই সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে। সঠিক চিকিৎসায় এ রোগের ৮০ শতাংশই সুস্থ হয়, তবে ৩ থেকে ৪ বছর লাগে।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, ঢাকার বাইরে ভালো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই আবার যন্ত্রপাতিও নেই। ঢাকার বাইরে দেশের পুরনো ৮ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়ে থাকে। এই হাসপাতালগুলোতে সব মিলিয়ে শিশু ক্যান্সার বিষয়ক চিকিৎসকের সংখ্যা ৪০ জনের বেশি নয় বলে জানা গেছে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: শাহ মো: রাশেদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিশুদের ক্যান্সারের মধ্যে ব্লাড ক্যান্সারেই ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শিশু আক্রান্ত হয়ে থাকে। শুরুতে ধরা পড়লে শিশুদের ৮০ শতাংশ ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, শিশুদের বেশির ভাগ ক্যান্সার হয় অজ্ঞাত কারণে। তা ছাড়া পারিপার্শ্বিক প্রভাবেও এই রোগটি হতে পারে। বাংলাদেশে ফলমূল, শাকসবজিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাবারের মধ্যে থাকা রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়ায় শিশুদের ক্যান্সার হতে পারে। কিছু ভাইরাসের কারণেও শিশুদের ক্যান্সার হয়। এর বাইরে বংশগত কারণেও শিশুদের ক্যান্সার হতে পারে। এ ছাড়া বাবা-মা ধূমপায়ী হলে শিশুর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, গর্ভকালে মায়ের ভুল খাদ্যাভ্যাস, শিশুর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভাইরাসও শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
কিছু ক্যান্সার রয়েছে যা শুধু শিশুদেরই হয়। কিডনি, মস্তিষ্ক, লিভারের ক্যান্সার, হাড়ের ক্যান্সার, জনন কোষের ক্যান্সার, চোখ ও রক্তের কিছু ক্যান্সার শিশুদের বেশি হয়। অধ্যাপক ডা: শাহ মো: রাশেদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, মোট কথা শিশুদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ক্যান্সার হতে পারে।
এ ছাড়া আরো যে ধরনের ক্যান্সার হয় সেগুলো হচ্ছে, লিম্ফোমাস এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের টিউমার। নিউরোব্লাস্টোমা, নেফ্রোব্লাস্টোমা, মেডুলোব্লাস্টোমা এবং রেটিনোব্লাস্টোমার মতো ক্যান্সারগুলো শুধু শিশুদেরই হয়ে থাকে। জিনগত কারণে অনেক শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপস্টেইন-বার নামে ভাইরাস ছাড়াও, হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভাইরাসও শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
শিশুদের বেশির ভাগ ক্যান্সারেই তেমন কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না, যে কারণে দেরিতে শনাক্ত হয়। শিশুর শরীরে কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে যেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক না। শিশুর শরীর ব্যথা, শরীরে ফোলা ফোলা ভাব, অনেক দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, সব সময় ক্লান্তিভাব, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম, হঠাৎ রক্তপাত হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে শিশুকে। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবহেলা করা ঠিক না। আমাদের দেশে রোগব্যাধি সম্বন্ধে বাবা-মায়ের অজ্ঞতা, চিকিৎসকের অপ্রতুলতা, অসুস্থ শিশুকে নিয়ে কোথায় যেতে হবে বাবা-মায়ের সে সম্বন্ধে ধারণা না থাকা এবং সঠিক সময়ে ক্যান্সার চিকিৎসা না হওয়ার কারণে শিশুরা ভোগে এবং মৃত্যু হয়ে থাকে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে এ সম্বন্ধে সব ধরনের তথ্য সবার মধ্যে প্রচার করে। চিকিৎসার যতটুকু সুযোগ তা-ই জনগণকে জানিয়ে দিতে পারলে তারা নিজেদের মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। শিশু ক্যান্সারের ওষুধগুলো কিছুটা ব্যয়বহুল। দুই থেকে তিন বছর চিকিৎসা নিতে হয় সুস্থ হতে।